সংবাদ বিজ্ঞতি:
বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা, সুষম পুষ্টি, বেকার সমস্যার সমাধান ও আত্ম কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নারীর ক্ষমতায়ন, কৃষি জমির উর্বরতা বৃদ্ধি, মেধা সম্পন্ন জাতি গঠন ও বৈদেশিক আমদানী নির্ভরতা হ্রাসে প্রাণিসম্পদের ভ‚মিকা অপরিসীম। বর্তমানে জিডিপিতে প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান ১.৯০% এবং প্রবৃদ্ধি ৩.১০%। কৃষিক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদের অবদান ১৬.৫২% যা জনসংখ্যার প্রায় ২০% মানুষকে প্রত্যক্ষ এবং ৫০% মানুষকে পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত করে।
গবাদি প্রাণীর খামার দ্রæত বর্ধনশীল ও সম্ভবনাময় একটি খাত হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। অসংখ্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা এ ব্যবসা শুরু করেছেন। উৎপাদন, বিপণন, সরবরাহ ও যোগান প্রতিটি পর্যায়ে ধারাবাহিক বৈচিত্রতা থাকায় এ খাতে যেমন সম্ভবনা রয়েছে তেমনি রয়েছে নানাবিধ ঝুঁকি। যার কারণে নতুন নতুন উদ্যোক্তা প্রায়ই বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সন্মুখীন হচ্ছেন। কিন্তু প্রাণিসম্পদের বিকাশ ও স¤প্রসারণে বিনিয়োগ বাড়াতে পারলে একদিকে যেমন পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে তেমনি বেকার জনগোষ্ঠীর বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরি হবে।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বিশ্বব্যাপী শিল্প ও জীবিকাকে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন করে চলেছে। বাংলাদেশের ডেইরী ও মাংস শিল্পকে আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে বিশ্বমানে উন্নীত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে আদর্শ প্রাণিসেবা লিমিটেড। এরই ধারাবাহিকতায় প্রাণিসম্পদ খাতে প্রান্তিক খামারীদের অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি এবং প্রাণী বীমা স¤প্রসারণে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ভ‚মিকা এবং প্রভাব নিয়ে বিগত ১৮ই সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে দিনব্যাপী একটি সেমিনারের আয়োজন করে আদর্শ প্রাণিসেবা লিমিটেড।
প্রথম সেশনে প্রধান অতিথি হিসেব উপস্থিত ছিলেন মাননীয় কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এম পি এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ। সেমিনারে প্রাণিসম্পদ খাতে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধিতে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব প্রযুক্তি প্রয়োগের জন্য যেসব নীতিমালা গ্রহণ করা প্রয়োজন তা সনাক্ত করা এবং বাস্তবায়নের পথে প্রতিবন্ধকতাসমূহ দূর করা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এই সেমিনারে প্রথম সেশনের প্রবন্ধ উপস্থাপক ছিলেন ড. মো. আইনুল হক, জাতীয় প্রকল্প সমন্বয়কারী, ইউনিডো এবং প্রাক্তন মহাপরিচালক, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
দ্বিতীয় সেশনে আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল প্রাণী বীমা স¤প্রসারণে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব প্রযুক্তির ভ‚মিকা। এই সেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এম পি এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী প্রফেসর ড. শামসুল আলম। আর এই অধিবেশনে প্রবন্ধ উপস্থাপক ছিলেন সাধারন বীমা কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান।
সম্মানিত আলোচক এবং বিজ্ঞ বক্তাদের সমন্বয়ে গঠিত
প্যানেলটি চতুর্থ শিল্প বিপ্লব এবং পঞ্চম প্রজন্মের টেলিকম প্রযুক্তি কিভাবে প্রাণিসম্পদ খাতের উৎকর্ষ সাধনে ব্যবহার করতে হবে সে সম্পর্কে বিশদভাবে আলোচনা করেন। প্যানেলটিতে প্রাণী বীমা স¤প্রসারণে প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কেও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এম পি বলেন, “কৃষি আমাদের জাতির মেরুদন্ড এবং গবাদি প্রাণী শিল্প কৃষির খুব বড় একটি অংশ। বাংলাদেশের প্রান্তিক খামারীদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোর জন্য চতুর্থ শিল্প বিপ্লব প্রযুক্তির ব্যবহারই সর্বোত্তম পথ।”
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এম পি বলেছেন, “গবাদি প্রাণীর বীমা এবং আনুষ্ঠানিক ঋণ প্রদানের জন্য প্রাণিসম্পদ খাতে খামারিদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোর লক্ষ্যে আদর্শ প্রাণিসেবার উদ্ভাবনগুলো অসাধারণ। দেশের প্রান্তিক গ্রামীণ কৃষকদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তনের মূল চাবিকাঠি হল আদর্শ প্রাণি সেবার মত সংস্থাগুলো।”
আদর্শ প্রাণিসেবার কো-ফাউন্ডার এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফিদা হক বলেন, “স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমাদের অর্জনের মুকুটের সবচেয়ে মূল্যবান রতœটি হচ্ছে কৃষিখাতের অবিস্মরণীয় অগ্রগতি। কিন্তু কৃষির এই অগ্রযাত্রায় আমিষ উৎপাদনকারী খাতগুলোর যেভাবে শামিল হওয়ার কথা ছিল, আমাদের প্রাণিসম্পদ খাত কি ঠিক সেভাবে এগুতে পেরেছে? দৈনিক আমিষ গ্রহণে আমরা এখনো বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছি।
আদর্শ প্রাণিসেবায় আমরা এর কারণ খোঁজার চেষ্টা করেছি। আমরা দেখেছি গবাদি প্রাণি খাতের অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে থাকার নানান কারণের মধ্যে একটা বড় কারণ হোল গবাদি প্রাণি খামারির মূল ধারার আর্থিক প্রক্রিয়ার সাথে সম্যকভাবে অন্তর্ভুক্ত হতে না পারা। মাছচাষ থেকে মহিষ পালন পর্যন্ত-মৃত্যুঝুঁকির অস্তিত্ব যেখানে সুস্পষ্ট-সেখানে বিনিয়োগ বা ঋণ সুরক্ষার অভাব সহজেই পরিলক্ষিত হয়। আর এই বিনিয়োগ বা ঋণ সুরক্ষার অনুভ‚ত অভাব সরাসরি প্রতিফলিত হয় খামারির বিনিয়োগ বা ঋণ-বিশেষ করে সহজ শর্তে ঋণ-না পাওয়ার মধ্যে। ঠিক এই জায়গাটায়, এই অচলায়তন ভাংতে, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব প্রযুক্তি রাখতে পারে যুগান্তকারী ভ‚মিকা। আর সেকারণেই আমাদের আজকের এই সেমিনার।”
এছাড়া এই সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব ইসমাইল হোসেন, সাংবাদিক, কৃষি উন্নয়ন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবদুল্যাহ হারুন পাশা, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, এ.টি.এম. মোস্তফা কামাল, ভেটেরিনারিয়ান ড. মো. আওলাদ হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও বীমা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. হাসিনা শেখ, ব্যাংক এশিয়ার প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী, এলডিডিপি এর চীফ টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর ড. মো. গোলাম রব্বানী, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের এমডি কায়সার হামিদ, বেসিসের ফিনটেক স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান এ কে এম ফাহিম মাশরুর, গ্রীন ডেল্টা ইন্সুরেন্স কোম্পানীর এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট শুভাশীষ বড়ুয়া, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স কোঃ লিঃ চেয়ারম্যান মোজাফফর হোসেন পল্টু ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা, সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান, দীপ্ত কৃষির প্রযোজক ও ইনচার্জ শামীমা শাওন, সিভাসুর সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. নীতিশ দেবনাথ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব ড. নাহিদ হোসেন, ইউএনডিপির কনসাল্ট্যান্ট মোহাম্মদ ইফতেখার হোসাইন, ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স কোঃ লিমিটেডের ডিএমডি মো. রফিকুর রহমান ও আদর্শ প্রাণিসেবার অপারেশন হেড কৃষিবিদ ডা. রেজাউল আলম রেজা।
কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে গাভীর জাত উন্নয়ন
বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। এ দেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে গবাদি পশু আবহমান কাল থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। “আমার...
Read more