জুন ২০২২ মাসের মাঝামাঝি সময়ে সুনামগঞ্জ জেলা বন্যা কবলিত হয়। হাজার হাজার মানুষ যখন বন্যার পানি ওঠায় নিজ নিজ বাড়িতে থাকতে পারছিলেন না। তখন আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামার সুনামগঞ্জ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক ডা. মো. আবদুল মমিন তাঁর খামার এলাকার প্রায় ১৫০০ অসহায় নারী, পুরুষ ও শিশুকে খামারে থাকতে দিলেন। খামারটিও তখন বন্যা কবলিত। হঠাৎ করে পানি বেড়ে যাওয়ায় ৩/৪ দিন ধরে খামারের প্রজননক্ষম ১৭০০ হাঁস পানিতে ভাসতে ছিলো।
তখন মানুষ বাচঁবেন না হাঁস বাচাঁবেন এমন পরিস্থিতিতে তিনি মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসলেন। তিনি খমারের জায়গায় ও নিজের থাকার কোয়ার্টারে ১৫০০ মানুষসহ তাদের গরু,ছাগল ও হাস-মুরগীকেও রাখার ব্যবস্থা করলেন। জুনের ১৫, ১৬ তারিখ থেকে লোকজন খামারে আসা শুরু করে। ২৫ জুন পর্যন্ত সকলে খামারেই অবস্থান করেন। শুধু থাকার জায়গা দিলে তো হবে না, তাদের খাবারের ব্যবস্থাও তো করতে হবে। এ যেন এক মহা পরীক্ষায় পড়লেন। আশ্রিত লোকজনের যার যা ছিলো এবং ডা. মমিন নিজের প্রচেষ্টায় খাওয়াতে থাকলেন। ২২জুনের পূর্বে তারা সরকারী বা বেসরকারী কোনো সাহায্য সহায়তা পায় নাই। কি কঠিন এক পরিস্থিতি তাদের গিয়েছে। আশ্রিত লোকদের মধ্যে ঐ এলাকার একজন নির্বাচিত ইউপি সদস্যও ছিলেন। ইউপি সদস্য মোক্তার হোসেন ও ডা. মমিনের চেষ্টায় ২২ জুন থেকে সেনাবাহিনীর দেয়া ত্রাণ সংগ্রহ করেন।
খামারে থাকা বিভিন্ন বাক্স, কাট দিয়ে মাচাঁ তৈরি করে হাঁস রাখার ব্যবস্থা করা হয়। ততক্ষনে ৪০০ হাঁস মারা যায। উল্লেখ্য যে,হাঁস পানিতে সাতার কাটে, সেখানে খাবার খায় কিন্তু বেশি সময় পানিতে ভেসে থাকতে পারে না। সে যাইহোক মানুষের চরম বিপদে কি করবেন, কার অনুমতি নিবেন এতসব ভাবনার সময় ডা. মমিন পাননি। তিনি আল্লাহর শ্রেষ্ঠ জীব মানুষসহ তাদের পশু-পাখিকে আশ্রয় দিয়েছেন এ এক বিশাল উদারতা, মানবিকতা ও দায়িত্ববোধের উজ্জ্বল উদাহরণ। বন্যায় আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামারের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অচিরেই খামারের উন্নত সংস্কার প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, তাঁরা যেন বিষয়টি আশু নজরে আনেন।