কৃষি সেক্টর উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী খাতের উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। এই কৃষি যদি না থাকে, কৃষির বিস্তার না হয, তাহলে আমাদের দেশ থমকে যাবে। বিগত ১৫ জুন গাজীপুরের রাজাবাড়িতে এসিআই এনিমেল জেনেটিকস রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার এর আনুষ্ঠানিক শুভ উদ্ভোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম উপরোক্ত কথা বলেন।
প্রধান অতিথি আল্লাহ রব্বুল আলামিনের শুকরিয়া আদায় করে তার বক্তব্য শুরু করেন। তিনি বলেন, করোনার সার্বিক পরিস্থিতির মধ্যেই আল্লাহ আমাদেরকে সুস্থ রেখেছেন। বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। এই কৃষি যদি না থাকে, কৃষির বিস্তার না হয, তাহলে আমাদের দেশ থমকে যাবে। আমাদের খাবারের প্রধান যোগান চাল, ডাল, গম, ভূট্টা, মাছ, মাংস, দুধ ও ডিম। এগুলো খাবারের চাহিদা মেটায়। পুষ্টি ও আমিষের চাহিদাও মেটায়। সেই ক্ষেত্রে একটা সময়ে সংকট ছিলো-প্রয়োজনীয় মাছের অভাব, মাংস পাওয়া যেত না, ডিম ও দুধ পাওয়া যেত না। কিন্তু বর্তমানে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বেসরকারী প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসায় আজ কিন্তু বাংলাদেশ মাছ, মাংস ও ডিমে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। আমরা অদূর ভবিষ্যতে দুধেও স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন করব।
তিনি বলেন, আপনারা শুনে অবাক হবেন, সরকার ১০০ টাকায় সার কিনে কৃষককে দেয় ১৫ টাকায়। কীটনাশক বিনামূল্যে প্রদান করে, কোথাও কোথাও নাম মাত্র মূল্যে দেয়া হয়। আধুনিক যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ৩ ভাগের ২ ভাগ দেয় সরকার এবং ১ ভাগ দেয় কৃষক। সরকার এজন্যে এটা দিচ্ছে যে, যাতে দেশের কৃষকগণ ভালো থাকেন, ভালো উৎপাদন করতে পারেন। খাদ্যে যাতে অভাব না হয়, দুগ্ধ উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ে এবং বেকারত্ব দূর হয়।
আমাদের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, প্রাণিসম্পদ গবেষনা ইনিস্টিটিউট প্রচুর কাজ করছে। সরকার গরু, ভেড়া, ছাগল ও মুরগিকে বিনামূল্যে ভেকসিন দিচ্ছে। কৃষককে স্বাভলম্বী করতে সরকার সাধারণ মানুষের পাশে দাড়াচ্ছে। খামারীর যে সহায়তা দরকার সরকার তা করছে।
মন্ত্রী মহোদয় এসিআইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তারা পরিশিলিত, পরিমার্জিত ও আধুনিক বিভিন্ন ইস্যুতে ভূমিকা রাখছেন। এ জায়গায় এসিআই ভূমিকা না রাখলে সরকারের একার পক্ষে কৃষকদের উন্নয়ন করা সম্ভব হতো না। আমরা চাই সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী খাতের উদ্যোক্তারাও এগিয়ে আসুক। এসিআই আজকের প্রজেক্ট থেকে কৃত্রিম
প্রজননের জন্যে সিমেন (বীজ) সংগ্রহ করছেন, সংরক্ষণ করছেন। যে সকল কৃষক নিতে চান তাদেরকে দিচ্ছেন। এখানে দেখলাম ১ মাসের বাচ্চা হৃষ্ট-পুষ্ট হচ্ছে। ৬ মাসের মধ্যেই বাচ্চাটি মায়ে পরিণত হচ্ছে। কত দ্রুততার সাথে ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছে। উপকার ভোগিদের উদ্দেশ্যে প্রধান অতিথি বলেন, আপনারা নিজের সন্তানের জন্যে যেরূপ সচেতন থাকেন, তদ্রুপ পশুটিকেই পালন করবেন। কারণ, ঐ পশুটিই আপনার সম্পদ, আপনাকে ভরণ পোষন করবে।
এ সরকার বেসরকারী বান্ধব সরকার। এসিআই ইন্ডাষ্ট্রি আরো বিকশিত হোক সেই প্রত্যাশা করছি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির আলোচনায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা বলেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা যারা এখানে একত্রিত হয়েছি সকলের উদ্দেশ্য কিন্তু এক। এ দেশকে আমরা কিভাবে প্রাণিসম্পদে স্বয়ং সম্পূর্ণ করব। আপনারা জানেন আমরা মাংসে ও ডিমে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। আমরা অচিরেই দুধে স্বয়ং সম্পূর্ণ হবো। আপনারা এবং আমরা সকলে একত্রে কাজ করলে আমাদের প্রচেষ্টা সফল হবে। ডা. শাহজাদা বলেন, আমাদর মাঠ কর্মীদের মনে রাখতে হবে, প্রাণিসম্পদের নীতিমালা অনুযায়ী প্রজননের সিমেন ব্যবহার করতে হবে। আমাদের কার্যক্রম সকলের জন্যে দৃষ্টান্ত হতে পারে। ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশের চাহিদা অনুযায়ী আমাদের সকল উৎপাদন বাড়াতে হবে।
এসিআই এগ্রি বিসনেজ লি. এর প্রেসিডেন্ট অনুষ্ঠানের সভাপতি ড. ফা হ আনসারী বলেন, আজকের দিনটি এসিআইয়ের জন্যে একটি মাইল ফলক। দীর্ঘদিন যাবৎ এসিআই প্রাণিসম্পদের সুরক্ষা ও উন্নয়নের জন্যে কাজ করছে। গবাদি পশুর খাদ্য, পুষ্টি, চিকিৎসা ও প্রতিশেধক, খামার ব্যবস্থাপনা সামগ্রী, আধুনিক প্রযুক্তি সমন্বিত যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে আসছে। গবাদি পশুর জাত উন্নয়নে কাজ করছে।
দুধ উৎপাদনে বাংলাদেশে অপার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রয়োজন কিছু উদ্যোগের। যেমন-দুধ ও মাংসের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্যে প্রয়োজন গবাদি পশুর জাতের উন্নয়ন, উন্নতমানের পশু খাদ্য সরবরাহ, উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসা, বিদ্যমান পলিসি পুনর্গঠনের প্রয়োজন, মাংসের জন্যে একটি
উন্নত জাত পলিসিতে অন্তর্ভুক্তকরণ জরুরী।
তিনি বলেন, এসিআই ইন্ডাষ্ট্রি এ সেক্টরে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি অন্তর্ভূক্ত করতে যাচ্ছে। আমাদের পরিচালনাধীন খামারের গাভীগুলো প্রায় ৪০ লিটার দুধ দিচ্ছে। খামারীদের মূল্যবান পশুগুলোর জন্যে বিমা কার্যক্রম চালুর পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। আগামীতে দ্রুত মাংস সরবরাহ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপনন ব্যবস্থা হাতে নেয়া হবে। ফলে কৃষকগণের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত হবে।
খুবই আশার কথা, আজকের তরুণ প্রজন্ম প্রাণিসম্পদ সেক্টরে কাজ করতে এগিয়ে আসছে। অনেক ক্ষেত্রে তারা উন্নতমানের বকনা ও ষাড় সংগ্রহ করতে পারছেন না। তাদেরকে সহায়তার লক্ষ্যে আমরা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উন্নত জাতের পশু সংগ্রহ করে তাদেরকে সরবরাহ করতে চাই। আপনারা জানেন ইতোমধ্যে এসিআইয়ের মাধ্যমে সারাদেশে অসংখ্য কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তরিকুল ইসলাম, গাজীপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারজানা ইয়াসমিন, শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবীর, গাজীপুর জেলা ডেইরী খামার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহীনুল ইসলাম শাহীন।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. রেয়াজুল হক, উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, এসিআই লি. এর উর্ধ্বতন কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ, জাতিয় প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক মিডিয়া, জাতিয় কৃষি ম্যাগাজিনের সম্পাদক ও সাংবাদিকবৃন্দ সহ স্থানীয় সংবাদ কর্মীগণ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি এসিআই এনিমেল জেনেটিকস রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার এর ফলক উম্মোচন করেন, জেনেটিকস রিসার্চ ল্যাব ও ব্রিডিং স্টেশন পরিদর্শন করেন এবং প্রজেনি শো ঘুরে ঘুরে দেখেন।
পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হয়। সমগ্র অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন জনপ্রিয় উপস্থাপক রুহানী সালসাবিল লাভলু।
এসিআই এর সিমেন ব্যবহার করে যে সকল খামারী সাফল্যের সাথে গরু পালন করছেন, বাচ্চা উৎপাদন করছেন তাদের মধ্যে ৫০ জন খামারীকে সম্মাননা ক্রেষ্ট প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে প্রায় তিন শতাধিক খামারীসহ সাতশত লোক উপস্থিত ছিলেন।