শেষাংশ:
চর্বির পরিমাণের চেয়ে চর্বির ধরনটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। চর্বি ফ্যাটি এসিড দ্বারা গঠিত। এ ফ্যাটি এসিড সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত দু ধরনের হতে পারে। যে সমস্ত চর্বিতে অধিক পরিমাণে সম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড থাকে তা বেশি খেলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে যা পক্ষান্তরে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। অন্যান্য মাংস অপেক্ষা মুরগির মাংসে আনুপাতিক হারে অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড থাকে এবং এ অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিডের ৫০ ভাগ হল ১৮ কার্বন বিশিষ্ট লিনোলেয়িক এসিড। তাই এ মাংস খেলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কোন ভয় থাকে না।
টেবিল ৫ : পোলট্রির বিভিন্ন প্রজাতির মাংসে ফ্যাটি এসিডের পরিমাণ (% লিপিড)
মুরগির মাংসে খনিজ পদার্থ: মুরগির মাংসে পর্যাপ্ত খনিজ পদার্থ আছে যা মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। খনিজ পদার্থগুলোর কার্যকারিতা নিচে উল্লেখ করা হল।
১. ক্যালসিয়াম : এটি ফসফরাসের সাথে যুক্ত হয়ে হাঁড় ও দাঁতকে মজবুত রাখে। কাজেই দাঁত ও হাড়ের দূর্বলতা দূর করতে ক্যালসিয়াম অত্যন্ত কার্যকরী।
২. ফসফরাস : কিডনী, লিভার এবং কেন্দ্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারীতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৩. আয়রন : কোষের বৃদ্ধি ও অক্সিজেন পরিবহনে সহায়তা করে।
৪. জিংক : এটি স্বাস্থ্যসম্মত ক্ষুধা ও স্বাদ বৃদ্ধি করে। ডিএনএ সংশ্লেষণ ও ইমিউন সিস্টেমের কার্যকারিতায় ভূমিকা রাখে। জিংক পুরুষের টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।
৫. সেলেনিয়াম : মুরগির মাংস যথেষ্ট পরিমাণে সেলেনিয়াম আছে যা বেশির ভাগ বিপাকীয় চক্রের জন্য অত্যন্ত জরুরী উপাদান। যেমন: থাইরয়েড বিপাক, এন্টি অক্সিজেন ডিফেন্স সিস্টেম এবং দেহের ইমিউন সংক্রান্ত কার্যক্রম। এটি বয়স্ক অবস্থায় মানুষের র্আথ্রাইটিসের ঝুঁকি কমায়।
৬. ম্যাগনেসিয়াম : এটি মেয়েদের ঋতুস্রাব জনিত ধকল মোকোবেলা করে কারন এ সময় দেহ হতে ম্যাগনেসিয়াম বের হয়ে যায়, ফলে রক্তে ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রা হ্রাস পায়। কাজেই এ ঘাটতি পুষিয়ে নিতে মুরগির মাংস খুবই উপযোগী।
টেবিল ৬: পোলট্রির বিভিন্ন প্রজাতির মাংসে খনিজ পদার্থের পরিমাণ (মিগ্রা প্রতি ১০০ গ্রাম ভক্ষণযোগ্য মাংস)
মুরগির মাংসে ভিটামিন : মুরগির মাংসে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন আছে যা মানবদেহের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মুরগির যকৃত ভিটামিন এ, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, নিয়াসিন ও ভিটামিন সি এর ভাল উৎস। মুরগির মাংস ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর একটি চমৎকার উৎস যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। নিম্নে ভিটামিনের কার্যকারিতা তুলে ধরা হল:
১. নিয়াসিন (বি৩) : মুরগির মাংসে নিয়াসিন আছে যা কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমিয়ে আনতে সহায়তা করে, তাই এ মাংস হৃদযন্ত্রের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত। এটি শর্করা বিপাকে সহায়তা করে। নিয়াসিনের ঘাটতিজনিত কারণে সরাসরি ডিএনএ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। এটি মানবদেহে ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। একজন ব্যক্তির দৈনিক চাহিদার ৬৪% নিয়াসিন ১০০ গ্রাম মুরগির মাংস হতে পাওয়া সম্ভব।
২. প্যান্টোথেনিক এসিড (বি৫) : ভিটামিন বি৫ স্নায়ুুকে শান্ত রাখে, ফলে দেহের ধকল দুরীভূত হয় বা হ্রাস পায়।
৩. ভিটামিন বি৬ : এ ভিটামিন রক্তনালীর সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে কারণ এটি “মিথাইল ডোনার” হিসাবে কাজ করে যার অভাবে রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ভিটামিন বি৬ হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এটি হোমোসিস্টিন (Homocysteine) এর মাত্রা হ্রাস করে যা হৃদরোগের কারণ হতে পারে। এ ভিটামিন ইমিউন সিস্টেম এবং রক্তে সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ভিটামিন বি৬ নিয়াসিন সহ এনজাইমের কার্যক্রমে সহায়তা করে ফলে সমস্ত দেহের বিপাক ক্রিয়া সুচারু রূপে পরিচালিত হয়।
৪. বায়োটিন (বি৭) : এ ভিটামিন কোষের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
৫. ভিটামিন বি১২ : এ ভিটামিনের কার্যকারিতা স্নায়ুকোষ ও লোহিত রক্তকণিকা রক্ষণাবেক্ষনের সাথে জড়িত।
টেবিল ৭ : পোলট্রির বিভিন্ন প্রজাতির মাংসে ভিটামিনের পরিমাণ (প্রতি ১০০ গ্রাম ভক্ষণযোগ্য মাংস)
মুরগির মাংস রান্না করা সহজ। আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষায় যে সকল পুষ্টি উপাদান প্রয়োজন তার মধ্যে আমিষ, খনিজ ও স্নেহজাতীয় পুষ্টির সমাবেশ আমরা এ মাংসে দেখতে পাই। পশুর অন্যান্য প্রজাতির মাংসে এ সকল পুষ্টি উপাদান থাকলে ও গুনগত মান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে মুরগির মাংসে বেশ কিছু বাড়তি সুবিধা আছে। আর এ জন্যই এর পুষ্টি মানের সঙ্গে অন্যান্য মাংস কোনভাবেই প্রতিযোগিতায় টেকে না। মানুষের পুষ্টির জন্য খাদ্যে কাংখিত বহুমুখী গুণাবালী মুরগির মাংসে বিদ্যমান। তাই সব দেশে সর্বকালে আদর্শ খাদ্য হিসেবে মুরগির মাংস বেশ সুপরিচিত।
সূএ:
1. Food value of poultry meat, S.D Chowdhury & B.C. Ray.
2. Role of poultry meat in human diet, Rosstech, Issue 02.
3. WAPSA Newsletter, February, 2015
লেখক : এজিএম, জোভিয়াল ফার্মাসিউটিক্যালস লি.