শেষাংশ
কৃত্রিম প্রজননের উপযুক্ত সময়:
১) গাভী বা বকনা গরম হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার পর থেকে ১২-১৮ ঘন্টার মধ্যে পাল দিলে সবচেয়ে ভাল ফল পাওয়া যায়।
২) গরম হওয়ার শুরু থেকে ৬ ঘন্টার মধ্যে পাল দিলে সফলতার হার ৪৫-৭০%।
৩) গরম হওয়ার শুরু থেকে ৭ থেকে ১৮ ঘন্টার মধ্যে পাল দিলে সফলতার হার ৭০-৯০%।
৪) ১৮ ঘন্টার পর পাল দিলে সফলতার হার ক্রমশঃ কমতে থাকে।
৫) কোন গাভী ভোরে গরম হলে সাধারণত বিকালে প্রজনন করাতে হবে এবং সন্ধ্যায় গরম হলে পরদিন সকালে প্রজনন করাতে হবে।
কৃত্রিম প্রজননের জন্য সংরক্ষিত সিমেনের ব্যবহার: কৃত্রিম প্রজননে দুই ধরনের সিমেন ব্যবহার করা হয়। যথা-
তরল সিমেন: এই সিমেনের প্রতিমাত্রা থাকে ১ মিলি যাতে ২০-৩০ মিলিয়ন শুক্রাণু থাকে। ৩ থেকে ৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাএায় এ সিমেন সংরক্ষন করা যায় ২-৩ দিন।
হিমায়িত সিমেন: এ সিমেন ধারনের জন্য ব্যবহৃত নলে ০.২৫ মিলি সিমেন থাকে। যাতে ২০-৩০ মিলিয়ন শুক্রানু থাকে। এ সিমেন-১৯৬ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় তরল নাইট্রোজেন ২০-২৫ বৎসর পর্যন্ত সংরক্ষন করা যায়।
কৃত্রিম প্রজনন সফল না হওয়ার কারণ:
১) সিমেন সংরক্ষণে এুটি হলে ও গুণগতমান সঠিক না হলে।
২) গরম কালের প্রথমভাগে বা গরম শেষ হওয়ার পর প্রজনন করা।
৩) মৃত ও দূর্বল শুক্রাণুযুক্ত সিমেন /বীজ (Non motile sperm) দ্বারা প্রজনন করা।
৪) প্রজননকারীর অনভিজ্ঞতা ও যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্ত না হলে।
৫) অনিয়মিত ডাকে আসা গাভীকে প্রজনন করা।
৬) গাভী রোগাক্রান্ত হলে, হরমোন নিঃসরণে ভারসাম্যহীনতা দেখা গেলে।
৭) যৌনাঙ্গের উপযুক্ত স্থানে বীজ স্থাপন করতে না পারা।
৮) গাভী পুস্টিহীনতায় ভুগলে।
৯) সিমেনের মধ্যে প্রয়োজনের তুলনায় শুক্রাণু কম থাকা।
১০) এুটিপূর্ণ সিমেন ক্যান থেকে স্ট্র বের করা এবং সিমেন ক্যানে নাইট্রোজেনের পরিমাণ কমে যাওয়া।
গাভী গরম হওয়া বা ডাকে আসার বিশেষ কয়েকটি লক্ষণ ও স্থায়ীত্বকাল:
গরমের প্রাথমিক ভাগ ও লক্ষণ (Early heat period & symptoms):
১) গরমকালে গাভী অস্থির থাকে এবং সবসময় ছটফট করে।
২) ঘন ঘন প্রসাব করে এবং ডাকতে থাকে।
৩) অন্য গাভীর উপর লাফানোর চেষ্টা করে।
৪) অন্য গাভীর যৌনাঙ্গেও গন্ধ শুকে।
৫) সঙ্গ পাওয়ার জন্য খোঁজাখুঁজি করতে থাকে।
৬) ক্রমেই গাভী অশান্ত হয়ে উঠে।
৭) যোনী মুখ ভেজা ভেজা ও ঈষৎ ফোলা ফোলা হয়ে যায় এবং সাদা পরিষ্কার আঠা জাতীয় পদার্থ নির্গত হয়।
৮) অন্য গাভীর উপর লাফিয়ে উঠে ও অন্যকেও নিজের পিঠে উঠার জন্য চুপ করে থাকে।
৯) অত্যন্ত সতর্ক হয়ে উঠে।
১০) কোমর নিচু হয় ও লেজের গোড়ার সংযোগস্থল উচুঁ হয়ে উঠে।
১১) অন্য গাভীর যৌনাঙ্গ শুকতে থাকে। যোনীমুখ ফুলে উঠে ও লালচে রং ধারণ করে।
১২) যৌনাঙ্গ থেকে আঠালো পদার্থ (Mucous) নিঃসৃত হয়।
১৩) কম খাওয়া দাওয়া করে ও দুধ কম হয়।
১৪) লেজ ও পিছনভাগে আঠালো পদার্থ লেগে থাকে।
১৫) অন্যের যৌনাঙ্গ নিজে শুকে ও নিজের যৌনাঙ্গ অপরকে শুকতে দেয়।
১৬) যৌনাঙ্গ থেকে আঠালো পদার্থ নিঃসৃত হয়।
১৭) লেজে শুকনো আঠালো পদার্থ লেগে থাকে।
গাভী বীজ না হওয়ার (Conceive) কারণ: আমাদের দেশের বেশিরভাগ খামারি ভাইদের গাভীর ঋতুচক্র সর্ম্পকে ধারণা না থাকার কারণে তারা সময়মত গাভীকে বীজ দিতে ব্যর্থ হয়। ফলে গাভী Conceive করে না। যদি খামারি ভাইদের গাভীর ঋতুচক্র সর্ম্পকে ধারণা থাকে তাহলে অনেকাংশে সফল হবে। ঋতুচক্রের চারটি ধাপ রয়েছে।
প্রথমটি Pro-estrus বা প্রস্তুতি পর্ব
দ্বিতীয়টি Estrous বা উত্তেজনা পর্ব
তৃতীয়টি Meta-Estrous বা কাম উত্তেজনা পর্ব
চতুর্থটি Diestrous বা নিষ্ক্রিয় পর্ব
প্রস্তুতি পর্ব (Pro-estrus): গাভী হিটে আসার তিন দিন পূর্ব থেকে খাওয়া-দাওয়া কম খাবে, ঝিমানি ভাব হবে। গাভীর যোনি মুখ দিয়ে স্বচ্ছ পাতলা ঝিল্লী বের হবে।
যৌন উত্তেজনা পর্ব (Estrous): এ পর্ব ১দিন স্থায়ী থাকে। আর আমাদের খামারি ভাইয়েরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এ পর্বেই বীজ দিয়ে থাকেন যার ফলে সমস্যাটার জন্ম হয় এখান থেকেই। এ পর্বে বীজ দিলে Conceive না করার হার ৯৮%।
লক্ষন: গাভী ঘন ঘন প্রস্রাব করবে। অন্য গাভীর উপর লাফিয়ে উঠবে। অন্য গাভীর যৌনাঙ্গ শুকতে থাকবে। দুধ উৎপাদন কমে যাবে।
কাম উত্তেজনা পর্ব (Meta-Estrus): এটি খামারি ভাইদের জন্য স্বর্ণযুগ বা সঠিক সময়। এ পর্বের স্থায়িত্ব কাল ১ থেকে ২ দিন। এ পর্বেই বীজ দেয়ার সঠিক সময়। এ সময় বীজ দিলে Conceive করার হার ৯৯%। এ পর্বের প্রধান লক্ষণ গাভীর যোনি পথ দিয়ে অনেক সময় রক্ত মিশ্রিত ঝিল্লী বের হয়। মনে রাখতে হবে গাভীর Estrous পর্ব দেখা দেওয়ার ১২ ঘন্টা পর বীজ দিবেন। অর্থাৎ সকালে হিট এ আসলে বিকালে (৫টা/৬টায়) বীজ দিবেন। যদি গাভীটি ঃ
পূর্বে হিট miss করে থাকে তাহলে সে গাভীকে অবশ্যই পরের দিন সকালে আবার বীজ দিবেন।
তৃতীয় বা শেষ ভাগ (Late heat period & symptoms): এ সময় সাধারণত ১২-১৪ ঘন্টা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
শেষ পর্ব (Diestrous): এটি থাকে ১৫ দিন। যদি আপনার গাভীকে বীজ না দেন তাহলে গাভীর জরায়ু থেকে বের হওয়া ডিম্বানু মারা যাবে এবং গাভীর সমস্ত জনন অঙ্গ স্বাভাবিক হবে। এর পর কয়েক দিনের মধ্যে আবার পুপষব বা চক্র শুরু হবে।
গাভী গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ:
বাহ্যিক পরির্বতন: গাভীর ঋতুচক্র বন্ধ হয়ে যাবে, ডাকে আসবে না। গাভী ষাঁেড়র কাছে থাকতে চায় না। ষাঁড় তদ্রুপ গাভীর কাছে থাকতে চায় না। গাভী আস্তে আস্তে শান্ত হতে থাকে। গাভীর শরীরে ধীরে ধীরে চর্বি জমতে থাকে। পেট বড় হতে থাকে এবং কোমর নিচের দিকে নামতে থাকে। দুধ আস্তে আস্তে কমতে থাকে। যৌনদ্বার ক্রমশঃ ফুলে উঠবে এবং নরম হতে থাকবে এবং ওলান ক্রমেই বড় হতে থাকবে এবং বাটগুলো নরম ও চকচকে দেখা যাবে। পাঁচ মাস পরে পেটের মধ্যে বাচ্চার নড়াচড়া বুঝা যাবে।
অভ্যন্তরীণ পরির্বতন: রেকটাল পালপেশন পদ্ধতিতে গর্ভবতী গাভীর অভ্যন্তরীণ পরির্বতন পরীক্ষা করা হয় এবং এটা প্রজননের ৬-১২ সপ্তাহ পরে করতে হবে। ডিম্বাশয়ে করপাস লুটিয়াম বড় হতে থাকে। ৯০ দিনের মধ্যে জরায়ুর শিংগুলোর (Horn) আকারের অসামঞ্জস্যতা বোঝা যাবে এবং গর্ভধারণকৃত শিং এর বৃদ্ধি বোঝা যাবে।
প্রসব পূবর্বতী ব্যবস্থাপনা: গর্ভকালের সাত মাস পর্যন্ত গাভীর পরিচর্যা, খাদ্য সরবরাহ, দুধ দোহন স্বাভাবিক ভাবেই চলবে। সাত মাস থেকে দুগ্ধ দোহন বন্ধ করতে হবে। যদি দেখা যায় দুধের প্রবাহ বন্ধ হচ্ছে না তখন দানাদার খাদ্য সরবরাহ কম করে শুধু খড় জাতীয় খাদ্য সরবরাহ করলে দুধের স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাবে। ৮ মাস থেকে বাচ্চা প্রসব পর্যন্ত গর্ভবতী গাভীকে সুস্বাস্থ্য রাখার জন্য উন্নতমানের সুষম খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। যেমন উন্নত জাতের কাঁচা ঘাস (যেমন নেপিয়ার, জাম্বু, ভূট্টা, জার্মান, পারা ইত্যাদি), খৈল ভুষি, ডাল, চিটাগুড় ইত্যাদি সরবরাহ করতে হবে। এর সাথে ক্যালসিযাম ও ফসফরাস জাতীয় খনিজ পদার্থ স¤পূরক হিসাবে খাওয়ানো উচিত। প্রসবের প্রায় দুই সপ্তাহ পূর্ব হতে গাভীর খাদ্যের পরিমাণ আস্তে আস্তে কমিয়ে দিতে হবে। পায়খানা পরিষ্কার এবং শরীর ঠান্ডা থাকে এ জাতীয় খাদ্য গাভীকে দিতে হবে। এ সময় গাভীকে শক্ত করে ছোট ঘরে বেঁধে না রেখে আলগা করে একটু বড় ঘরে রাখতে হবে যেন গাভী সহজেই নড়াচড়া করতে পারে। এ সময় গাভীকে উত্তেজিত করা, তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এ সময় গাভীর জন্য পরিষ্কার নরম বিছানা খুবই উপকারী। প্রসব কালীন গাভীর ওলান যখন খুব বেশী ফুলে যায়, শক্ত হয় এবং শাল দুধে পূর্ণ থাকে তখন পরিষ্কার জায়গা ও বিছানার প্রয়োজন হয় খুব বেশী।
প্রসবের পরর্বতী প্রজনন সময়: বাচ্চা প্রসবের পর প্রজনন অঙ্গ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে ৬০ দিন সময় লাগে। জরায়ুতে গর্ভসঞ্চালনের স্বাভাবিক পরিবেশের জন্য প্রসবের পর ৬০ দিন অবসর দিতে হয়। এর পূর্বে গাভী গরম হলে এবং প্রজনন করানো হলে গর্ভধারনের হার কমে যায় এবং গর্ভকালীন বাচ্চার মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পায়। সুতরাং বাচ্চা প্রসবের কমপক্ষে ৬০ দিন পর গাভীকে প্রজনন করাতে হবে।
বাংলাদেশে কৃত্রিম প্রজননের জন্য ব্যবহৃত জাতসমূহ: আমাদের দেশে বর্তমানে যে সকল বিদেশী উন্নত জাতের ষাঁেড়র সিমেন কৃত্রিম প্রজননের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলো নিম্নরূপ:
১. হলস্টিন ফ্রিজিয়ান ২. শাহিওয়াল এবং ৩. ব্রাহমা (পরীক্ষামূলক)
বাংলাদেশের বর্তমান গো-প্রজনন নীতিমালা: তাৎক্ষনিক ও দীর্ঘ মেয়াদী উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যে গো প্রজনন নীতিমালা কর্মসূচী বাস্তবায়নকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়েছে যা নিম্নে প্রদত্ত হল:
ক) স্বল্প মেয়াদী কার্যক্রম (৫ বছর পর্যন্ত): এ পর্যায়ে দেশের গবাদি পশুর বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে
তাৎক্ষনিকভাবে বাস্তবায়ন করা হবে।
খ) মধ্য মেয়াদী কার্যক্রম (৬-১০ বছর পর্যন্ত): এ পর্যায়ে স্বল্প মেয়াদী কর্মসূচী বাস্তবায়নের মূল্যায়ন ও আরো বেগবান করা হবে।
গ) দীর্ঘ মেয়াদী কার্যক্রম ও নীতিমালা (১১ বছর ও তদুর্দ্ধ): এ পর্যায়ে স্বল্প ও মধ্য মেয়াদী বাস্তবায়নের চুড়ান্ত মূল্যায়ন করা সাপেক্ষে গবাদি পশুর টেকসই উন্নয়নের জন্য কর্মসূচীসমূহ চলমান রাখা হবে।
বাংলাদেশে গবাদি পশুর উন্নয়ন ও কৃত্রিম প্রজননের ইতিহাস: ১৯৩০ সালের পূর্বে এদেশের গবাদি পশুর উন্নয়নের জন্য কোন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় নি। এসময় কৃষকেরা নিজেরাই ষাঁড় পালন করে অথবা ধর্মীয়ভাবে ছেড়ে দেয়া ষাঁড় দিয়ে প্রজনন করাতো। ১৯৩৩ সালে তৎকালীন বৃটিশ ভারতের ভাইসরয় লর্ড লিনথিনগো এদেশের গবাদিপশুর উন্নয়নের জন্য ভারত হতে কিছু হরিয়ানা জাতের ষাঁড় নিয়ে এসে পাবনা, সিরাজগঞ্জ, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও ঢাকা অঞ্চলে কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করেন এবং ত্রিশ দশকে সিলেটের টিলাগড় এবং ঢাকার তেজগাঁয়ে দুটি দুগ্ধ খামার স্খাপিত হয়। সেই থেকে বাংলাদেশের গবাদিপশু উন্নয়নের সূচনা। ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্থান বিভক্তির ফলে হরিয়ানা ষাড়ঁ প্রাপ্তিতে অনিশ্চয়তার কারনে সিলেট ও তেজগাঁও খামার দুটি প্রজনন খামার হিসেবে রূপান্তর করা হয়। এ খামার দুটোতে পাকিস্থান হতে সিন্ধি, শাহীওয়াল, থারপরকার গাভী ও ষাঁড় আমদানি করা হয়। পরবর্তীতে এ খামার দুটি হতে উৎপাদিত ষাঁড় দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রাকৃতিক প্রজননের জন্য কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়। এভাবে পরিকল্পনাহীন প্রজননের দ্বারা বিভিন্ন প্রজাতির সংমিশ্রনের ফলে সুনিদিষ্ট জেনেটিক উন্নয়ন ও ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। তবে দেশের গবাদি পশুর আকার ও দুধ উৎপাদন কিছু বৃদ্ধি পায়।
স্বাধীনতার পূর্বে ১৯৫৮ সালে সর্বপ্রথম কৃত্রিম প্রজনন কর্মসূচী হাতে নেয়া হয় এবং ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুর, রাজশাহী এবং যশোরে কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। পরর্বতীতে কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম ঠাকুরগাঁও, পাবনা, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, বরিশাল, কুমিল্লা, নোয়াখালী, সিলেট এবং ময়মনসিংহে সম্প্রসারণ করা হয়। ১৯৬৯ সালে সাভার খামার সহ সমগ্র দেশের গবাদি পশুর উন্নয়নের জন্য পাকিস্তান ও জার্মান সরকারের মধ্যে একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এ কর্মসূচীর কার্যক্রম বন্ধ থাকে। পরর্বতীতে ১৯৭২-৭৩ সালে এ চুক্তি নবায়ন করা হয় এবং ১৯৮২ সাল পর্যন্ত জার্মান বিশেষজ্ঞগণ এদেশে কাজ করেন।
স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে অস্ট্রোলিয়া সরকার অনুদান হিসাবে ফ্রিজিয়ান এবং জার্সি জাতের ১২৫ টি গাভি এবং ষাঁড় প্রদান করেন। ফ্রিজিয়ান জাতের সাথে দেশী জাতের সংকরায়নের ফলে উৎপাদন আশাব্যঞ্জক হওয়ায় ১৯৭৫-৭৬ সালে সমগ্র দেশ ব্যাপী কৃত্রিম প্রজনন সম্প্রসারণ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। ১৯৭৬ সালে প্রাণীসম্পদ উন্নয়নে একটি ব্রিডিং পলিসি প্রণয়ন করা হয় যা ১৯৮২ সালে সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হয়। এ পলিসি ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত কার্যকর ছিল। উক্ত পলিসি ১৯৯৭ সালে সংশোধন করা হয়। এই পলিসি মোতাবেক জার্সি জাত বাদ দিয়ে ৫০% ফ্রিজিয়ান এবং ৫০% শাহীওয়াল জাতের ষাঁড় উৎপাদন করে সারা দেশে কৃত্রিম প্রজনন কর্মসূচী শুরু করা হয়। পরর্বতীতে ২০০৭ সালে ব্রিডিং পলিসি পুনরায় সংশোধন করে লাইভস্টক ডেভেলপমেন্ট পলিসি ২০০৭ এর অন্তর্ভূক্ত করা হয়। বর্তমানে কৃত্রিম প্রজননে নতুন মাংস উৎপাদনকারী জাত হিসেবে ব্রাহমা অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। বর্তমানে ঢাকার সাভারে ও রাজশাহীর রাজাবাড়ীহাটে ২টি বুল স্টেশন কাম কৃত্রিম প্রজনন গবেষণাগার, ২২ টি জেলা কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র, ৪৭৭ টি কৃত্রিম প্রজনন উপকেন্দ্র এবং ৩৭২৫ টি কৃত্রিম প্রজনন পয়েন্ট চালু আছে। বেসরকারী প্রতিষ্টান ব্রাক সারাদেশে কৃত্রিম প্রজনন কর্র্মসূচী বাস্তবায়ন করে থাকে। এছাড়াও মিল্কভিটা, আমেরিকান ডেইরী, এসিআই, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ব বিদ্যালয় সহ আরো বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান স্বল্প পরিসরে কৃত্রিম প্রজনন করে থাকে। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে DLS এর বার্ষিক প্রতিবেদন মোতাবেক প্রায় ৪২ লক্ষ সিমেন উৎপাদন করে ৩৬.৬৮ লক্ষ গাভীকে প্রজনন করানো হয়।
রেফারেন্স: ১) লাইভস্টক সর্ম্পকিত পুস্তিকা ২) কৃত্রিম প্রজনন সম্প্রসারণ ও ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষন ম্যানুয়াল ৩) ইন্টারনেট।
লেখক: এজিএম, তামিম এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লি.