সংবাদ বিজ্ঞপ্তি:
তরুণ প্রজন্মের জন্য প্রোটিনের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে কারণ স্বাস্থ্যবান ও মেধাবি জাতি গঠনে প্রোটিন গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে। বিগত ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘রাইট টু প্রোটিন’ শীর্ষক সেমিনারে এ কথাগুলো বলেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাসের এগ্রিকালচারাল অ্যাটাশে মেগান ফান্সিক। বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) এবং ইউ এস সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিল (ইউএসএসইসি) যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে।
মেগান ফান্সিক বলেন, বাংলাদেশে উদ্ভিজ্য ও প্রাণিজ আমিষের উৎপাদন বাড়াতে উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র মৎস্য ও প্রাণিখাদ্য, প্রাণিসম্পদ খাত এবং কৃষির উন্নয়নে ইউএসডিএ সহায়তা করছে। মেগান বলেন, ১৬৭ মিলিয়ন মানুষের প্রাণিজ আমিষের যোগান দিতে বাংলাদেশে প্রতিদিন প্রতিদিন ৫ কোটি ডিম ও ৪ হাজার মেট্রিক টন পোলট্রি মাংস উৎপাদিত হচ্ছে। কাঁচামাল সরবরাহের মাধ্যমে এ উৎপাদনে সহায়তা করতে পেরে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকেরাও গর্ব বোধ করেন। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সাশ্রয়ী মূল্যের প্রাণিজ আমিষ উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে পোলট্র্রি শিল্প। পোলট্রি শিল্পের বহুমুখী প্রসার ঘটছে-ব্যাকওয়ার্ড ও ফরওয়ার্ড লিংকেজ আরও শক্তিশালী হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের পরীক্ষিত অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে মন্তব্য করেন বিপিআইসিসি’র সভাপতি মসিউর রহমান। বাংলাদেশের কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য মার্কিন সরকারসহ ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসকে ধন্যবাদ জানান মসিউর। তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়ন ঘটাতে হলে খাদ্য নিরাপত্তার পাশাপাশি পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। মাইক্রোসফটের জনক বিল গেটস্ বলেছেন- ঈযরপশবহং, হড়ঃ পড়সঢ়ঁঃবৎং, পধহ ংড়ষাব ঢ়ড়াবৎঃু. কাজেই অপুষ্টি ও দারিদ্র দূর করতে হলে পোলট্র্রি’র কোন বিকল্প নেই। মসিউর বলেন, আমাদের প্রত্যাশা বাংলাদেশ একদিন সমৃদ্ধ, উন্নত দেশ হবে। বাঙালী হবে মেধাবি জাতি। আমরা সর্বোতভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি একটি শক্তিশালী পোলট্রি শিল্প গড়ে তুলতে; সাশ্রয়ী দামে ডিম ও মুরগির মাংস ভোক্তাদের দিতে। আমরা চেষ্টা করছি ডিম, মাংসকে আরও অধিক নিরাপদ করতে। তাঁর ভাষায় দেশীয় পোলট্র্রি শিল্প এখন কঠিন সময় পার করছে । বর্তমান সংকট দূর করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করেন তিনি।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক বারডেম হাসপাতালের পুষ্টি বিভাগের প্রধান পুষ্টিবিদ- শামসুন্নাহার নাহিদ মহুয়া বলেন, অপুষ্টির কারনে বাচ্চাদের ওজন ও উচ্চতা কম হয়; মা ও শিশুর মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ে, বাড়ন্ত বয়সের কিশোর কিশোরীদের নানাবিধ
শারিরিক ও মানসিক জটিলতা দেখা দেয়। সবচেয়ে ভয়ানক বিষয়টি হচ্ছে- অপুষ্টি’র প্রভাব প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সঞ্চারিত হয়। তাই উন্নত দেশ ও জাতি গড়তে হলে আমাদেরকে অপুষ্টির অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতেই হবে। মহুয়া বলেন, বর্তমান সময়ে ইলিশ মাছ থেকে ২২ গ্রাম প্রোটিন পেতে হলে প্রতিদিন ১৭০টাকা ব্যয় করতে হয়। অন্যদিকে দুধ, বোনলেস গরুর মাংস এবং ডিম থেকে ২৫ গ্রাম প্রোটিন পেতে ব্যয় করতে হচ্ছে যথাক্রমে ৬৮টাকা, ৮৫টাকা এবং ৪৮ টাকা। কাজেই দেখা যাচ্ছে মূল্যবৃদ্ধির এ বাজারে এখনও ডিমই সবচেয়ে সস্তার প্রাণিজ প্রোটিন।
ইউএস সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিলের সাউথ এশিয়া এন্ড সাব সাহারা অঞ্চলের হেড অব মার্কেটিং ডিবা ইয়ানুলিস বলেন, পোলট্রি শিল্পের চাহিদা অনুযায়ী সয়াবিনের যোগান দিতে ইউএসএসইসি প্রতিশ্রæতিবদ্ধ। তিনি বলেন, জাতিসংঘের এসডিজি অর্জনে জিরো হাঙ্গার বা ক্ষুধা নিবারণ অন্যতম প্রধান একটি লক্ষ্য। তবে দায়িত্বহীনভাবে এ কাজটি করলে হবেনা। খামার থেকে শুরু করে খাবারের পেট পর্যন্ত পুরো ভ্যালু চেইনকে নিরাপদ ও টেকসই করতে হবে। মার্কিন কৃষকরা সয়াবিনের মান উন্নত করতে বিরামহীন পরিশ্রম করে চলেছেন। তাঁরা বৈষ্ণিক উষ্ণতা, জলবায়ু পরিবর্তন, কার্বন ফুট প্রিন্ট, পানির দায়িত্বশীল ব্যবহার, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ইত্যাদি বিষয়গুলোকে মাথায় রেখেই কাজ করে থাকেন। ইয়ানুলিস বলেন, শুধু বর্তমান নয় বরং ভবিষ্যত চাহিদার কথা মাথায় রেখেই আমরা কাজ করছি।
ব্রিডার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু লুৎফে ফজলে রহিম খান শাহরিয়ার বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী মানবদেহের শক্তির ১০ থেকে ১৫ শতাংশ আসা উচিত আমিষ জাতীয় খাদ্য থেকে। আর এই আমিষের ২০ শতাংশ আসতে হবে প্রাণিজ আমিষ থেকে। উন্নত বিশ্বের অনেক দেশেই এই আমিষের ৫০ শতাংশ আসে প্রাণিজ আমিষ থেকে। একটি পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মাথাপিছু প্রোটিন কনজাম্পশন ৮৩ গ্রাম যার ৬৭ শতাংশই আসে প্রাণিজ আমিষের উৎস থেকে। কাজেই শুধু প্রোটিন কনজিউম করলেই হবেনা, অহরসধষ ঝড়ঁৎপব থেকে চৎড়ঃবরহ ইনটেকের পরিমান আরও বাড়াতে হবে। আমাদের দেশে ডিমের উৎপাদন অনেক বাড়াতে হবে কারণ সরকার ২০৩০ সাল নাগাদ মাথাপিছু ডিমের কনজাম্পশন ১৬৫টি এবং ২০৪১ সাল নাগাদ ২০৮টিতে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন। শাহরিয়ার বলেন, বিগত বছরগুলোর তুলনায় বর্তমানে অপুষ্টির হার অনেক কমে এসেছে; তবে এখনও তা কাঙ্খিত প্রত্যাশার অনেক নিচেই অবস্থান করছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক উৎপাদন, ড. মো. রেজাউল হক বলেন, ডিমকে সুপার ফুড বলা হয় আর দুধ কে বলা হয় আদর্শ খাদ্য। ডিমের ভেতর সৃষ্টিকর্তা এমন কিছু দিয়ে দিয়েছেন যে তার ভেতর থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন পরিপূর্ণতা লাভ করে। অন্যদিকে দুধ এমনই এক খাদ্য যা শিশু জন্মের পর থেকে শুরু করে ৬ মাস বয়স পর্যন্ত মাত্র দুধ খেয়েই বেঁচে থাকতে পারে-এমনকি পানিরও প্রয়োজন পড়ে না। অনেকেই বড় হয়ে দুধ খাওয়া ছেড়ে দেন-এটা ভুল সিদ্ধান্ত। অনেক দেশের মানুষ প্রচুর পরিমান তরল দুধ পান করেন। অধিক পরিমান তরল দুধ খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে কিন্তু পনির বা দুধ দিয়ে তৈরি অন্য ধরনের ভ্যালু অ্যাডেড খাবার খেলে সমস্যা নাই।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ডা. মো. কামরুল হাসান খান বলেন, নোবেল বিজয়ীদের তালিকায় উন্নত বিশ্বের মানুষের সংখ্যাই বেশি কারণ তারা পর্যাপ্ত পরিমানে পুষ্টিকর খাবার খায়। তিনি বলেন, বাজারে সবকিছুর দাম বেড়েছে, ডিমের উৎপাদন খরচও বেড়েছে। এমন কিছু করা ঠিক হবেনা যাতে পোলট্র্রি শিল্পের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়।
ইউএসএসইসি’র বাংলাদেশ প্রধান খবিবুর রহমান কাঞ্চন বলেন, সাধারন মানুষের মাঝে প্রোটিন বিষয়ক সচেতনতার অভাব রয়েছে। প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে মানুষ যত বেশি জানবে ডিম ও মুরগির মাংস সহ অন্যান্য প্রোটিন গ্রহণের পরিমান ততই বাড়বে। তিনি বলেন, পোলট্রি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে উদ্ভিজ্জ প্রোটিনকে রূপান্তরিত করে প্রাণিজ প্রোটিন উৎপাদন করা হয়। মুরগির খাদ্য তৈরিতে প্রধান যে দু’টি উপকরণ সবচেয়ে বেশি দরকার হয় তার একটি হচ্ছে ভ‚ট্টা এবং অন্যটি সয়াবিন। যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন যে কোন মূল্যে সব থেকে সেরা। গুনে ও মানে যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন সেরা বলেই ফিড ফর্মূলেশনে এর পারফরমেন্স সবচেয়ে বেশি। আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিনের চাহিদা আরও বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সেমিনারে অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন সাজেদা ফাউন্ডেশন হাসপাতালের পুষ্টিবিদ ইশরাত জাহান, ব্রিডার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি কাজী জাহিন হাসান, ওয়ার্ল্ড’স পোলট্র্রি সায়েন্স এসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখার সাধারন সম্পাদক মো. মাহাবুব হাসান। সঞ্চালক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক শ্যামল কান্তি ঘোষ। অংশগ্রহণকারি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন কলেজ ও বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং মসজিদের ইমাম ও মদরাসার ছাত্র।
সেমিনারের শুরুতে পোলট্রি মুরগির ডিম ও মাংস দিয়ে রান্নার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। চুড়ান্ত পর্বে ১৩জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন। এতে প্রথম হন গভঃ কলেজ অব অ্যাপ্লায়েড হিউম্যান সায়েন্স এর চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সানজিদা ইসলাম রূপা; তৃতীয় হন একই কলেজের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী সিদরাতুল মুনতাহা পারিকা এবং দ্বিতীয় হন সাভার সরকারি কলেজের সমাজকর্ম চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নিবিড় রহমান। প্রথম পুরস্কার বিজয়ীকে ২০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় বিজয়ীকে ১৫ হাজার টাকা এবং তৃতীয় বিজয়ীকে ১০ হাজার টাকার প্রাইজমানি প্রদান করা হয়। এছাড়া প্রত্যেক প্রতিযোগিকে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
ড. এফ এইচ আনসারী পেলেন জাতীয় মৎস্য স্বর্ণপদক ২০২২
পুষ্টিতথ্য নিউজ ডেস্ক: মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বাজারজাতকরণ, রপ্তানি এবং মৎস্যজাত পণ্য বহুমুখীকরণ ক্ষেত্রে অবদান রাখায় জাতীয় মৎস্য...
Read more